লাভবার্ড এর আদিনিবাস আফ্রিকায়। বৈচিত্র্যপূর্ণ রং, ঠোঁট ও মাথার গঠনের কারণে সারা বিশ্ব এই নামেই পরিচয়। পৃথিবীতে নয় জাতের লাভবার্ড দেখা যায়। সঙ্গির সাথে ভালবাসার শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধনের কারণে লাভবার্ড ভালবাসার অন্যরূপ। জাত ভেদে এদের গায়ের রং আলাদা হয়। লাভবার্ডের মত ৫০ জাতের বিদেশী পাখি ও ১০০ জাতের কবুতর এর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যনিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
গতকাল শনিবার সকাল ১০ টায় এই প্রদর্শনী শুরু হয়ে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীতায় এসোসিয়েশন অব এভিয়ারি এন্ড ভেটেরীনারিয়ান্স, চিটাগাং বার্ড ব্রিডার্স এসোসিয়েশন ও চট্টগ্রাম ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্সের নামে তিনটি সংগঠন এই প্রদর্শনী ও কর্মশালার আয়োজন করে। সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সামশুল আরেফিন।
মেলায় প্রদর্শিত পাখি ও কবুতরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেইনবো বা জরিকা, রিংনেক, ইন্ডিয়ান রিংনেক, রোজেলা, রেন্ট, ককাটেইল, বোখাড়া, পোটাস, ইংলিশ ক্যারিয়ার, জাভা স্পারো, জেকুভিস, সান পারাকিট, টিং, ফ্লাইট, গাবারিয়াল, বোলহেড, শেকশ্যায়ালি, জার্মান ক্লেপার, টুস্পাটার, মালটার, হাউজ, সিরাজি, হোয়াট টপ, ফিজেন, ভিকোটরিয়া ক্রাউন, হোয়াইট দিঞ্চ, লংটেইল দিঞ্চ, জেব্রা দিঞ্চ, গান্িয়ান দিঞ্চ, জাভা, বাজরিকা, ম্যাকাও, কাজেন, লিনেক্স, রেডমংগ, লংফেজ,সান কুনর ও লরিকেট ইত্যাদি। পাখি গুলো ভারতিয়, আফ্রিকার, আস্ট্রেলিয়ান, চীন ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশের জাত।
প্রর্দশনীতে অংশ নেয়া পাখি গুলোর মালিকরা সবাই শখের বসে এদের লালন-পালন করে। যারা পাখি নিয়ে এসেছেন তাদের প্রত্যেকের গড়ে এক জোড়া পাখি আছে। আয়োজকরা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাখি প্রেমিদের কয়েকটি গ্রুপের যোগাযোগের মাধ্যমে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ২০০ জন পাখির মালিক এতে অংশ নেয়। পাখি ও কবুতর গুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। দেশের আবহাওয়ার সাথে এরা মানিয়ে চলতে পারে। আয়োজরা জানান, প্রতিটি বাজারিয়া ১ হাজার ২শ টাকা, লাভবার্ডের ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা, লরি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, কনুর ১ লক্ষ টাকা, কাকাতুয়া ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ম্যাখাও ২ লক্ষ টাকা দাম।
বিদেশী জাত হলেও পাখি ও কবুতরগুলো ছোলা, মুগুর ডাল, খেসারীর ডাল, মুসুর ডাল, গম, বাদাম সহ সবুজ সবজি ও শাক খায়। এই ধরণের খাবার আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পাওয়া যায় বলে লালন-পালনে খুব একটা অসুবিধা হয় না। প্রদর্শনীতে ভিক্টোরিয়া ক্রাউন এবং ম্যাকাউ পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ এর অনার্সের ছাত্র বালুছড়া এলাকার বাসিন্দা নায়িম। শখের বসে বাজেরিগার জাতের এক জোড়া পাখি পালন করেন। তিনি জানান, ডাল ও সবজি এই জাতের পাখির প্রধান খাবার। ৮-১০ মাস বয়সে একটি পাখি বাচ্চা দেয়ার জন্য উপযুক্ত হয়। দেখতে সুন্দর হওয়ায় এই জাতের পাখি পালন করছি। পাখি পালন আমার শখ। প্রদর্শনীতে নিজের পাখি এনে সবাইকে দেখাতে পেরে আমার ভালো লাগছে।
মেলায় প্রদর্শিত ভিক্টোরিয়া ক্রাউন কবুতরের মালিক জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বিদেশ থেকে কবুতরটি কিনে এনেছি। এর বর্তমান দাম প্রায় ৫ লক্ষ টাকা।
মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও এসোসিয়েশন অব এভিয়ান ভেটেরিনারিয়ান্স এর নির্বাহী সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, দ্বীতিয়বারের মতো এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর আয়োজনের সাফল্যের কারণে এই বছর আবারো প্রদর্শনী করেছি। পাখি পালন করে যুব সমাজের কর্মসংস্থান হতে পারে। কিন্তু এটি আমাদের দেশে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। ভালো জাতের পাখির দাম ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পাখির পালন বাড়াতে পারলে রপ্তানি করে আমরা কয়েক কোটি টাকা আয় করতে পারতাম।
প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থী সিরাজ কবির বলেন, এতো বিচিত্র্য জাতের পাখি এর আগে একসাথে কখনও দেখি নাই। পাখি গুলো এতো সুন্দর যে কয়েকটি সাথে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। এমন আয়োজন আরো বেশি বেশি হওয়া উচিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন বলেন, তরুণ প্রজন্মরা পাখি ও কবুতর পালন করে একদিকে যেমন আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। অন্যদিকে আর্থিক লাভবানও হচ্ছে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিরোধে পাখি পালন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব এভিয়ান ভেটেরিনারিয়ান্স ইন বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. ভজন চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ। ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, পাখি পালন করে দেশের যুব সমাজকে জঙ্গীবাদ থেকে দূরে রাখা সম্ভব। আমরা আগামীতেও এই ধরণের আয়োজন নিয়মিত করতে চায়।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সাহেদুল আলম কাদেরী, টিচিং ভেটেরিনারী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রায়হান ফারুক, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক, অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন।
বক্তব্য রাখেন সিভাসু’র ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক, সীতাকুণ্ডের ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভুইয়া, ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন। কর্মশালায় অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. মাসুদ্দুজ্জআমন ও ডা. সুলতান মাহমুদ আকন্দকে পোল্ট্রি প্রেকটিশনার এ্যাওয়ার্ড এবং অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমানকে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
পাঠকের মতামত: